Career after HSC এইচ এস সি-এর পর কি করবো?
শুধু এইচ এস সি কেনও অনার্স পড়ুয়া অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন প্রশ্ন। কেননা, ক্যারিয়ার বলুন, পেশা বলুন আর জীবিকাই বলুন, নিজের জীবনের এই সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ নয়।
ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি ফরম পূরণ করার পরেও দ্বিধায় থাকে যে, এই বিষয়ে পড়া তার জন্য ঠিক হবে কি না।
এতে তাদের দোষ হয়তো নেই। কারণ, হয়তো এর আগে কখনও কি করবে সে বিষয়ে জানার আগ্রহই হয়নি। অথবা, হলেও জিজ্ঞাসা করেও তারা এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকেও যথার্থ কোনও উত্তর পায়নি। হ্যাঁ, আমাদের কিছু শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
ছাত্রছাত্রীদের দ্বিধার একটি কারণ উদাহরণ হিসেবে দেখা যাক।
যেমন- কেবলমাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ১০ টির উপরে বিষয় রয়েছে, যেমন- Computer Science & Engineering( CSE ), Software Engineering, Computer Networking, etc. এখন কোনটা নিয়ে পড়লে ভবিষ্যতে কি করা যাবে? কোন বিষয়টা কোন চাকরিতে কাজে লাগবে? এগুলো তাদেরকে কে বুঝাবে?
ছাত্রছাত্রীরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে গেলেও ভাবে, অন্যরা ভাববে আমি কিছুই জানিনা। অথচ, তার আশেপাশের অনেকেই তেমন কিছু জানে না। মনে রাখবে, জানতে চাওয়াটাই গৌরবের। জানতে না চাওয়াটা বোকামি।
তবে, দামী কথা হোলও, যেহেতু তুমি সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছও, তাই বলবো, এ বিষয়ে নিজে হাজার বার দেখে শুনে বুঝে, প্রয়োজনে অনলাইনে পছন্দের ক্যারিয়ার সম্পর্কে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানার চেষ্টা করো। তা না হলে, অনেক গুলো বছরের সাথে অনেক সুযোগ নষ্ট হতে পারে। অথবা এমন কিছু করতে হবে যা তোমার ভালো লাগে না। পছন্দের কাজ যত কষ্টের-ই হোক নিজ থেকে করার একটা উৎসাহ থাকে।
স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে তোমাকেই, তাই অন্য কারো স্বপ্ন দেখানো কথার ভেল্কিবাজিতে পরে জীবনের সময় আর সুযোগ নষ্ট করো না।
ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার এর টাইটেল গুলোকেই বড় করে দেখো না। যদি না তোমার কাছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় যেমন- পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান চেষ্টা করেও ভালো না লাগে।
তবে একটি আসার কথা হোলও বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পড়লে তুলনামূলক চাকরির ক্ষেত্র একটু বেশি এবং চাইলে পরবর্তীতে অন্য অনেক ক্ষেত্রে চলে যেতে পারবেন।
ছাত্রছাত্রীদের আরেকটি সচেতনতা মূলক কথা বলবো আর তা হোলও কোচিং সেন্টারের বড় ভাইদের কথার ফাঁদে পরবে না। কেননা, সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, তোমার জীবন নিয়ে বিজনেস করার অধিকার তাদের দিও না।
ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার এর ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বয়ান শুনেছ। এর বাইরেও ডজন খানেক ক্যারিয়ার রয়েছে, যা নিয়ে চিন্তা করে দেখতে পারো । তাই এখানে আমি সেগুলোরই নাম, আর এন্ট্রি লেভেল এ যোগদানের যোগ্যতা উল্লেখ করছি। বিস্তারিত আলোচনা অন্য কোনও লেখায় দেয়ার চেষ্টা করবো, যদি আল্লাহ্ সুযোগ দেন।
এইচ আর এবং অ্যাডমিন HR/ Admin:
এই দুইটি পেশায় এক্সিকিউটিভ অথবা অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ,
সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিবিএ ইন ম্যনেজমেনট , ব্যচেলর অফ সোসিয়াল সাইন্স ( বিএসএস ) ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।
অভিজ্ঞতা হিসেবে, কম্পিউটারের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যেমন- MS Excel, MS word, Power Point, etc. এর কাজ জানা থাকতে হয়, সাথে সার্টিফিকেট।
বিভিন্ন সময় অনেক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান উপর্যুক্ত দুটি পেশায় Internee করার সুযোগ দেয়। যোগ্যতা থাকলে সুযোগ কাজে লাগানো উচিৎ।
সাইকিয়াট্রিসট / Psychiatrist:
মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার বেস কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে, যেমন- ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, কাউন্সেলিং, স্পোর্টস সাইকোলজি, চাইল্ড সাইকোলজি, ইত্যাদি।
সরকারি বেসরকারি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ রয়েছে।
মারচেনডাইজার / Merchandiser:
গার্মেন্টস অথবা বায়িং হাউজ গুলোতে আমদানি রফতানি অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক কেনাবেচায় মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি।
Trainee অথবা অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগদানের যোগ্যতা হিসেবে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং -এ বিএসসি উল্লেখ করা হয়।
আর যদি এই সেক্টরে নিজের কোনও লোক থাকে, তবে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রী শেষে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েই পেশা শুরু করতে পারেন।
ডিফেন্স Defence:
সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগদানের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি রয়েছে।
প্রথমটি হোলও, এইচ এস সি এর পর BMA Long Course বিএমএ লং কোর্স। অন্যটি হোলও স্নাতক এর পর BMA Special Course বিএমএ স্পেসিয়াল/ সর্ট কোর্স।
সফটওয়ার / অ্যাপ্লিকেশন অথবা ওয়েব ইঞ্জিনিয়ারিং Software/ Application/ Web Engineering:
আপনার যদি প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করার ধৈর্য থাকে তবে হতে পারেন একজন সফটওয়ার, অ্যাপ্লিকেশন অথবা ওয়েবসাইট ডিজাইনার অথবা ডেভেলপার। এক্ষেত্রে যদি ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন, তবে চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা কোনরকম সমস্যায় পড়তে হবে না। চাকরি যেখানে খুশি নিতে পারবেন, এমনকি চাকরি না করে, নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাসে লাখ টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
এছারাও অনলাইনে ক্যারিয়ার শুরুর অনেক রাস্তা রয়েছে। যেমন- গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ইত্যাদি।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার তিনটি বিভাগের মধ্যে, ছাত্রছাত্রীরা আর্টস এর ভবিষ্যৎ নিয়ে, সবচেয়ে বেশি দ্বিধা আর অনিশ্চয়তায় থাকে। আমাদের শিক্ষকদের অনেকেরও এ বিষয়ে ধারণা নেই যে আর্টস নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে আইন বা বিসিএস ছাড়া আর কোনও দিকে পেশাদার হওয়া যায় কি না।
তুমি যে বিষয়েই বিএসসি অথবা এমএসসি করো না কেনও বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি কিছু কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারো, যেমন- মিডিয়া কন্টেন্ট তৈরির জন্য স্ক্রিপ্ট তৈরি, ফটো এবং ভিডিও এডিটিং, ইত্যাদি। তবে, ভবিষ্যতে মিডিয়া, প্রেজেন্টেশন, এর মতো অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। যেমন- Communicatios & Media Specialist, Presenter, Host, Script Writer, Photographer, ইত্তাতি।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি ইংরেজি নিয়ে অনার্স অথবা মাস্টার্স করতে পারো।
শেষ কথা,
পৃথিবীতে কোনও কাজ-ই সহজ নয়। এমনকি আমি যে কথা গুলো লিখলাম, তাও কিন্তু সহজে করতে পারিনি। ব্লগার হওয়ার জন্যও আমাকে ধৈর্যের সাথে অনেক মানসিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। যদিও জানি না, এটা কার কতটুকু উপকারে আসবে।
আজ এ পর্যন্তই।
ভালো থাকো, আর সুন্দর স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে, নিজের এবং অন্যের উপকার করো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please, do not enter any spam link in the comment box.