নতুন-পুরাতন, সুপ্ত আমাশয় (ডিসেন্ট্রি ) নিরাময়ের উপায় / চিকিৎসা Dysentery treatment:
আমাশয় এমন একটি রোগ যাতে আক্রান্ত হলে, রোগী কোনও ধরণের আমিষ জাতীও খাবার যা খেলে শরীর গঠন হয়, তা হজম করতে পারেন না। তাই, আপনার স্বাস্থ্য যেমন ই হোক না কেনও, যদি দীর্ঘদিন যাবত এ রোগে আক্রান্ত থাকেন, তবে স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি হতে পারে।
তবে ভয় পাবেন না। আমি প্রথমে এ রোগের কিছু সম্ভাব্য কারণের উল্লেখ করছি, আপনি যদি এগুলো না ছাড়তে পারেন, তবে ওষুধ সেবন করেও কোনও উন্নতি হবে না।
অতিরিক্ত স্নেহ পদার্থ আহার Excess fat intake:
অনেকের ক্ষেত্রে আমাশয়ের কারণ হতে পারে, দীর্ঘদিন যাবত তেল বা চর্বি জাতীও খাবার খাওয়া। অনেকের ধারণা, বেশি তেল বা চর্বি জাতীও খাবার খেলে দ্রুত ভালো স্বাস্থ্য পাওয়া যায়। কিন্তু অতিরক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়। এই অতিরিক্ত তেল চর্বি লিভারে ও পরিপাকতন্ত্রে জমে গিয়ে হজম শক্তি নষ্ট করে দেয়।
তাই, আপনি যদি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে চেষ্টা করবেন তেল একেবারেই এড়িয়ে চলতে।
খোলা যে কোনও খাবার Any food that is open:
ঘরে বা বাহিরে যেখান থেকেই খাবার খান না কেনও, খেয়াল রাখবেন খাবারে যেন বেশিক্ষণ হাওয়া-বাতাস বা হাতের স্পর্শ না লাগে।
এক বেলার খাবার অন্য বেলায় খাওয়া Eat one meal at another time:
যেকোনো খাবার ( টক-মিষ্টি যা-ই হোক ) স্বাভাবিক অবস্থায় অর্থাৎ বিসুদ্ধ অবস্থায় শুকনো থাকে। আর একে কিছুক্ষণ খোলা রেখে দিলে এর ওপরটা আঠালো, আদ্র ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়।
এ ধরণের খাবার খেলেও কিন্তু আমাশয় হতে পারে। কারণ খোলা রাখার কারণে এর ওপর বাতাসের জীবাণুর আক্রমণ হয়েছে। খাবারের কিন্তু কোনও দোষ ছিলও না, একে ঢেকে রাখলেই হতো।
আপনার হজম শক্তি ভালো থাকলে, এরকম খাবার ভুলে একটু খেয়ে ফেললে সমস্যা নাও হতে পারে। কিন্তু, নিয়মিত খেলে সমস্যা হতে পারে।
রাতের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা Extra anxiety at night:
আপনি যদি মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে থাকেন, তবে এটি আপনার ঘুমে ব্যঘাত সৃষ্টি করেবে। আর নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে হজমসক্তি ও খিদের ভাব অর্থাৎ খাবারের রুচি কমতে থাকবে।
লক্ষন সমুহঃ
একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তবে মৌলিক কিছু উপসর্গ রয়েছে, যেমন-
১। মলের সাথে পচ্ছিল তরল নির্গত হওয়া।
২। আর এর কারণেই, জ্বর জ্বর ভাব ও দুর্বলতা।
৩। ক্ষণস্থায়ী বেদনাদায়ক মলত্যাগ
৪। সামান্য বা তীব্র পেট ব্যথা।
৫। কারো কারো ক্ষেত্রে গলা শুকিয়ে যেতে পারে।
সুস্থ হতে যা করতে পারেন Which can do to be healthy:
প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে আপনার আই বি এস ( ) আছে কি না, অথবা হয়েছে কি না। যদি থেকে থাকে, তবে উপরের নিয়ম গুলো মেনে চললেই আপনার আমাশয় কিছু দিনের মদ্ধেই ভালো হয়ে যাবার কথা।
দুই ধরণের জীবাণু ঘটিত আমাশয়ের ক্ষেত্রেই মেট্রোনিডাজল বা ফ্লাজিল জাতীয় ঔষধ কিছু দিন সেবন করলেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে, উপর্যুক্ত নিয়ম মেনে চলার পরেও একটানা ৫-৭ দিনের অতিরিক্ত আমাশয় থাকলে, অবশ্যই প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাতে হবে।
অনেকের আই বি এস এর সমস্যা বেড়ে গেলে কখনও তারা আমাশয় ভেবে মেট্রোনিডাজল এর মতো ঔষধ সেবন করে ফেলেন। এরপর মল বন্ধ হয়ে গেলে, রোগী ভাবেন তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন। অথচ, ঔষধ এর কোর্স শেষ হলে আবার উপসর্গ দেখা দেয়।
কারণ এটা হয়তো আমাশয় নয়, আই বি এস, যা পরিপাকতন্ত্রের একটি ফাংসনাল রোগ। এই রোগের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষায় কোনও কিছু ( যেমন- জীবাণু ) ধরা পরে না। সুতরাং, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। পেট এবং মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন। উপর্যুক্ত নিয়ম মেনে চললে কিছুদিন পর এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাবেন।
-মশলা জাতীয়, ভাঁজা অথবা প্রক্রিজাত যেকোনো খাবারের ( যেমন- চানাচুর, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি ) পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবার খান।
-বেশি বেশি সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
-কাঁচামরিচ খাওয়ার অভ্যাস করুন, এটি হজম শক্তি বারাবে, আর টক খাওয়া বাদ দিন। কারণ, এ ধরণের খাবার পাকস্থলীর এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
-কিছু দিন আমিষ( মাংস, বড় মাছ, দুধ ইত্যাদি ) জাতীয় বা পেট গরম হয় এমন খাবারের পরিবর্তে শসা, পাকা পেপে, দই, ইত্যাদি পেটঠাণ্ডা করী খাবার খান।
-আর আমাশয়ের ফলে শরীর থেকে যেহেতু প্রয়োজনীয় মিনারেল ও তরল পদার্থ বের হয়ে গেছে, তাই, সেই দুর্বলতা কাটাতে ও শক্তি ধরে রাখতে, একটু পর পর তরল খাবার যেমন- ফলের সরবত, জাও ( তরল ভাত ) ইত্যাদি খাবেন।
সুস্থ হবার পরেও খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের উপর্যুক্ত নিয়ম গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please, do not enter any spam link in the comment box.